সাধারণ মানুষের ধারণায় তন্ত্র একটি রহস্যে ঢাকা বিদ্যা। সেই কারণে তন্ত্র সাধক বা তান্ত্রিকদের ব্যাপারে মানুষের একটা অমুলক ভয় আছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যেখানেই কোন দেব বা দেবীর পূজা হোক না কেন তা হয় ১) বৈদিক ২) পৌরাণিক ও ৩) তন্ত্র মতে। পৌরাণিক পূজো বহুলাংশেতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত। শুধু বেদ তন্ত্রের সকল রকম প্রভাব থেকে মুক্ত। কিন্তু সাধারণ মানুষ বৈদিক মতে পূজো করার সময়ও তন্ত্রের অনেক আচার অনুষ্ঠান অজান্তেই পালন করে। যেমন পূজোর আগে নিজের শুদ্ধিকরণের জন্য মন্ত্র বলতে হয়-- " ওঁ অপবিত্র পোবিত্রবা সর্বাবস্থাং গতপিবা যতস্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষ ইত্যাদি " যার মানে যাকিছু অপবিত্র সব পবিত্র হোক - বলে গঙ্গা জল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এটা আসলে তন্ত্রের মন্ত্র।
তন্ত্র সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের মনে সংশয়ের কারণ হল তন্ত্র দর্শন ঠিক প্রণালীবদ্ধ ভাবে উপস্থাপিত করা ছিল না। বেদ, উপনিষদ, কোরাণ, বাইবেল সবই প্রথম থেকে প্রণালীবদ্ধ ভাবে বেধে দেওয়া আছে। তন্ত্রের পুরাণ যেমন খাপছাড়া তেমনি তন্ত্রের আচার বিচার গুলিও সুনির্দিষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ নয়। তন্ত্র সাধকেরা যে যার নিজের খুশিমতো নতুন নতুন আচারপ্রথা তন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তাই সুনির্দিষ্ট ভাবে এটাই তন্ত্রের শেষ কথা বলার কোন উপায় নেই।
তন্ত্রের দ্বিতীয় সমস্যা হল, তন্ত্রের জন্ম কোথায় কিভাবে হয়েছে কেউ জানে না। এই ব্যাপারে বিভিন্ন পণ্ডিতের বিভিন্ন মত। তন্ত্রের যে সকল বই আমাদের হাতে আছে তাতে পণ্ডিতরা বলেছেন বেদ হল শেষ কথা। কিন্তু অন্যদিকে এটাও বলেন বেদ সর্বোচ্চ কিন্তু আমরা তার সমান। কারণ হিসাবে তারা বলেন বেদ ব্রহ্মার কথা, ব্রহ্মার মুখ থেকে বেরিয়েছে। আর তন্ত্র শিবের মুখ থেকে বেরিয়েছে। তাই তন্ত্র ও বেদ সমান। বেদ কবে লেখা হয়েছে, কবে সৃষ্টি হয়েছে তা জানার কোন উপায় নেই। তন্ত্রও তাই। তন্ত্রের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হলেন শিব। শিব ছাড়া তন্ত্রের কল্পনা করা যায় না, যদিও বৈষ্ণবতন্ত্রে শিবকে কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় নি, কিন্তু বাকি সব তন্ত্র মানেই শিবের কথা।
সংস্কৃতে যেকোন শব্দের একটা ধাতু থাকে, ধাতুটা হল উৎস। এই ধাতুর ব্যবহার ল্যাটিন ভাষাতেও আছে। ধাতুদিয়ে শব্দের অর্থকে বোঝা যায়। যেমন বেদ এসেছে বিদ্ ধাতু থেকে, বিদ্ মানে জানা, মানে জ্ঞান। তন্ত্রও ওই অর্থই হয়। জানা বা জ্ঞান, যেখান থেকে জ্ঞান জন্ম নিচ্ছে বা প্রসারিত হয়েছে। তন্ত্র শাস্ত্র অধ্যায়ন করলে জ্ঞানের উন্মেষ হবে। জ্ঞান শুধু জন্মই দেয় না, ওখান থেকে ঈশ্বর জ্ঞান প্রসারিত হয়, বাড়তে থাকে। অনেকের মতে তত্ত্ব আর মন্ত্রের সন্ধি হল তন্ত্র। মন্ত্র বিজ্ঞান দিয়ে যখন তত্ত্বজ্ঞান লাভ হয় তখন সেই বিষয়কে তন্ত্র বলা হয়। তার মানে তন্ত্রের দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক, প্রথম হল মন্ত্র, মন্ত্র ছাড়া কখনই তন্ত্র হবে না। আর মন্ত্রের মূল কাজ হল তত্ত্বজ্ঞান দেওয়া। এখানে এসেইবাকি সব দর্শন, তন্ত্র থেকে আলাদা হয়ে যায়।
"কুলাচারং বিনা দেবি শক্তিমন্ত্রো ন সিদ্ধিদঃ। তস্মৎ কুলাচারতঃ সাধয়েচ্ছক্তিসাধনম্।" শিব বলেছেন, যতক্ষণ কুলাচার না করা যায় অর্থাৎ কৌল মতে যতক্ষণ সাধনা না করা হয় ততক্ষণ শক্তিমন্ত্রে সিদ্ধি হয় না। কুলাচারের মধ্যেই আছে পঞ্চ-মকার সাধনা। পঞ্চ-মকার মানে, মদ্য, মাংস, মৎস, মুদ্রা ও মৈথুন। এই পাঁচটি 'ম' দিয়ে যতক্ষণ না সাধনা করা হচ্ছে ততক্ষণ কুলাচার সাধন কখনই সম্পূর্ণ হয় না। পঞ্চ-মকার সাধনা প্রত্যেক সাধকের অবশ্যই করনীয়। মহানির্বানতন্ত্র অনেক পরের দিকের রচিত বলে অনেক কিছুকে আর মার্জিত করে পঞ্চ-মকার সাধনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বেদান্তের পঞ্চতত্ত্ব- আকাশ, বায়ু, তেজ, জল ও পৃথিবী এই পাঁচটা তত্ত্বকে মহানির্বানতন্ত্রে পঞ্চ-মকারের পাঁচটা জিনিষের সাথে জুড়ে দিয়েছে। এই কারণে তন্ত্রের দুটো পথ হয়ে গেছে। একটা পথে (বামাচার) তন্ত্রের সাধকরা আক্ষরিক অর্থেই পঞ্চ-মকার সাধনা করছে, মদ, মাংস, মাছ, চালভাজা, ছোলাভাজা, মেয়ে সামনে রেখে সাধনা করছে। আবার অন্য পথে (দক্ষিণাচার) পঞ্চ-মকার সাধনে পঞ্চতত্ত্বকে এই পাঁচটি দ্রব্যের বিকল্প রূপে প্রয়োগ করে পঞ্চ-মকার সাধনা করছে। যেমন আরতির সময় দীপ, বস্ত্র, শঙ্খের জল, পুষ্প ও চামর দিয়ে আরতি করছেন, এই পাঁচটাই হয়েগেল পঞ্চ-মকারের বিকল্প পঞ্চমহাভূত। এটাই মহানির্বাণতন্ত্রের বৈশিষ্ট। সেই জন্য শিব বলেছেন, " মদ্যং, মাৎস্যং তথা মৎস্যং মুদ্রা মৈথুনমেবচ। শক্তিপূজাবিধাবাদ্যে পঞ্চতত্ত্বং প্রকীর্ত্তিতম্।" এই পঞ্চ-তত্ত্ব ব্যাতীত শক্তিপূজা কখনই সম্বব নয়। এই পঞ্চ-তত্ত্ব ব্যাতীত শক্তিপূজা করলে সাধনা কোনদিন সফল হবে না। শিব বলেছেন "পঞ্চতত্ত্বং বিনা পূজা অভিচরায় কল্পতে। নেষ্টাসিদ্ধিভবেৎ তস্য বিঘ্নতস্য পদে পদে।" এই শ্লোকে শিব তন্ত্রের প্রাচীন যে পরম্পরা মত সেটাকে উল্লেখ করে বলেছেন পঞ্চ-মকার সাধনা না করলে ইষ্ট সাধন হবে না। সিদ্ধি তো হবেই না, তার সাথে সাথে পদে পদে বিঘ্ন আসবে।
চৈতন্য যে কোন ধর্মের প্রধান বিষয়। মানুষ যতই বুদ্ধিমান লোক হোক না কেন চৈতন্যের স্বরূপ ধারনা করতে পারবে না। চৈতন্য সত্ত্বার প্রকাশ মানে সেই চৈতন্য শক্তি। এই শক্তিকে ধরতে হলে মন্ত্র দিয়েই ধরতে হয়। তন্ত্র বলছে, মহাজাগতিক সমষ্টিরই ছোট্ট একটি রূপ হল কম্পন। যেমন বৈদ্যুতিক শক্তি হল একটা চৌম্বক ক্ষেত্র, সেখানে একটা কম্পন হচ্ছে। ঠিক তেমনি যখন বলছি ওঁ বা ক্লীং বা হ্রীং, এগুলোতেও একটা কম্পন হচ্ছে। তন্ত্রও তাই বলছে, মা হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শক্তি। যখন মন্ত্রের হ্রীং উচ্চারণ করা হছে তখন সেই শক্তির একটা কম্পন হচ্ছে। এই স্পন্দনের সাহায্যে মূল স্পন্দনকে ধরে নেওয়া যায়। এটাই হল মন্ত্রের সংযোগ।
তন্ত্রের সব উপাচারের উদ্দেশ্য হল ভোগ আর অপবর্গ। যেখানেই কোন নিয়ম অনুসারে শারীরিক প্রক্রিয়া থাকবে সেটাই উপচার। মহানির্বানতন্ত্র বলবে যেখানে যোগ সেখানে ভোগ হয় না, আর যেখানে ভোগ সেখানে যোগ হতেই পারে না। কিন্তু তন্ত্রের বিশেষত্ব হল এখানে যোগ ও ভোগ একসাথে চলে। বেদান্ত মতে কেউ সাধনা করতে চাইলে প্রথমেই তাকে ভোগ ত্যাগ করতে বলা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ সাধনা থেকে দশ হাত দূরে চলে যায়। তন্ত্রের বাধানিযেধ নেই। তন্ত্রে প্রথমেই বলা হয় সাধনা করতে। মনকে একাগ্র করতে। পরে ভোগের সামগ্রী ( মঞ্চ-মকার) সাধনার অনুমতিদেওয়া হয়। তাই তন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয়। তন্ত্র এই ব্যাপারে খুবই খোলামেলা।
তন্ত্র সাধারণ মানুষের মনের মতন। তোমার কি কি ভোগ করার ইচ্ছা আমাকে বল, আমার কাছে এলে সব করার সুযোগ পাবে। এই ভোগকে আমরা পাল্টে দেব যোগের মধ্যে। এখান থেকেই তন্ত্রের সাধনা শুরু হয়। প্রথমে এই সব ভোগের আকর্ষণে অনেকেই সাধনাতে নেমে পড়ে, তারপর তন্ত্র সাধনার কঠোর অনুশীলন ও পরিশ্রমের জোয়াড়ে ভেসে যায় ভোগের লালসা। তন্ত্রের শদ্ধিকরণ এইখান থেকেই শুরু হয়। এতদিন যেই মনটা ভোগের মধ্যে পড়ে ছিল, সেই ভোগ থেকে মনটাকে টেনে নিয়ে এসে পরে ঐ জিনিষগুলোই তার সামনে দিয়ে চেষ্টা করা হবে তাকে যোগে কিভাবে নিয়ে যাওয়া হবে। ভোগাসক্ত মনটাকে এবার এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে সে ধীরে ধীরে যোগের দিকে যেতে পারে। এটাই হল তন্ত্রের পদ্ধতি।
তন্ত্র জগত ও জগতের বাইরে যা কিছু সবটাকেই স্বীকার করে। এই ব্যাপারে তন্ত্রের সাথে ইসলাম ধর্মের মিল আছে। অন্য ধর্মের মতে "যারা গরীব তারাই স্বর্গ পাবে"। স্বামীজী এর প্রতিবাদে বলেন "আমি সেই ভগবান কে বিশ্বাস করি না যে ভগবান আমাকে এখানে একটা রুটি দিতে পারে না অথচ আমার মৃত্যুর পর আমাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে।" তন্ত্রের মতে যোগ যতটা সত্য, ভেগটাও ততটা সত্য। কারণ, শক্তি সত্য। শক্তি যদি সত্য হয় তাহলে জগতটাও সত্য। জগত যদি সত্য হয় তাহলে ভোগ করাটাও সত্য। ভোগকরা যদি সত্য হয় তাহলে ভোগ করার ইচ্ছাটাও সত্য। আবার কেউ যদি ভোগ ত্যাগ করে অপবর্গের দিকে যেতে চায় তখন সেটাও সত্য। সবটাই সত্য হয়ে যাচ্ছে। স্বামীজী বার বার সেবার আদর্শের উপর জোর দিয়ে গেছেন। জগতটা যদি মিথ্যাই হয়, সৃষ্টি যদি মায়া হয় তাহলে সেবার প্রয়োজন কোথায়! তা নয়, শক্তি মতে জগতটা সত্য। সেইজন্য তন্ত্রমতে এই জগতে যা কিছু হচ্ছে সবটাই সত্য। তন্ত্র যখন জগতকে সত্যরূপে নিচ্ছে তখন জগতের সমস্যাগুলো সত্য। এই সমস্যাগুলকে মোকাবিলা করার জন্য তন্ত্রের উপাচারের বাহুল্যের শেষ নেই। তন্ত্রে যে কতরকমের উপাচার রয়েচে তা বলে শেষ করা যায় না। তন্ত্রের যে সাধারণ আচার উপাচার রয়েছে এর বেশিরভাগই হল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের শুদ্ধিকরনকে নিয়ে। এছাড়া প্রাণায়াম, ন্যাস, শারীরিক ও মানসিক পূজা। এই উপাচারের সাথে সাথে স্নানের উপরেও খুব জোড় দেওয়া হয়েছে। মানুষের ধারনা তান্ত্রিকরা হাড় গোড় নিয়ে নুংরা হয়ে থাকে তা নয়। তন্ত্রে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার খুব গুরুত্ব। একানে তর্পণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এতে মনের শুদ্ধি ও তৃপ্তি আসে। এর পর ভূত শুদ্ধি ও ধ্যান। ধ্যানের দ্বারা ইষ্টের সাথে সাধকের একাত্মভাবটাকে জাগিয়ে দেওয়া হয়। এর পর হোম। নিজেকে উৎসর্গ করে দেওয়ার নামই হোম। হোমের পর সাধকের নিজস্ব সত্ত্বার কোন অস্তিত্ব থাকে না, ইষ্টের সাথে নিজের ব্যাক্তিত্ব এক হয়ে যায়। বেদের সাথে এর অনেক মিল আছে। বেদে যে যজ্ঞাদি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে করা হত, তেমনই তন্ত্রে পূজার সবকিছুকে উৎসর্গ করে দেওয়া হয়। হোম করা মানে নিজেকে ঢেলে দেওয়া আর যজ্ঞ করা মানে একটা বিশেষ কর্ম করা। এই যজ্ঞই পরবর্তী কালে হোমে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
বেদে প্রচুর আচার বিধি মেনে চলতে হত। মহানির্বানতন্ত্রে এক জায়গায় বলা হয়েছে তোমাকে ইষ্ট মন্ত্র দেওয়া হয়েছে, সেই ইষ্ট মন্ত্র জপ করে দিলেই সব শুদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা যদি অজান্তেই কোন নোংরা কাজ করে ফেলি বা নোংরা কোনকিছুতে পা দিয়ে ফেলি তাহলে ইষ্ট মন্ত্র জপ করলেই শুদ্ধ হয়ে যাব।কিন্তু আচারি বৈদিক ব্রাহ্মণ যতক্ষণ না স্নান করবে বা মাথায় গঙ্গা জল নেবে ততক্ষণ নিজেকে শুদ্ধ বা পবিত্র মনে করতে পারবে না। তন্ত্র পুরো দৃষ্টিভঙ্গীকেই পাল্টে দিচ্ছে। তন্ত্র বাস্তবধর্মী ও সহজ। তন্ত্রকে যে যাই বলুক না কেন, তন্ত্রের সবকিছুই অত্যন্ত সরল। তন্ত্র সম্বন্ধে আমাদের অন্যরকম ধারণা থাকলেও কিন্তু সারা ভারত এই তন্ত্রদর্শনের উপরই চলছে। যত পূজা, দীক্ষাদি ও সাধনা সবই তন্ত্র মতে হচ্ছে। ইদানিং কালে ধর্মীয় যা কিছু হচ্ছে তন্ত্র, যোগ, বেদান্ত সব মিলে মিশে এক নতুন আকার নিয়েছে।
বেদের বৈশিষ্ট থেকে তন্ত্রের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল তন্ত্র পুরপুরি পরীক্ষালব্ধ বিজ্ঞান, অর্থাৎ এখানে তত্ত্বের কিছু নেই, এখানে সব কিছু হাতেনাতে করতে হবে। আর যে, তন্ত্র অনুশীলন করবে সে নিজে নিজের জন্যই করবে। পরের দিকে এখান থেকে একটু সরে এসে তন্ত্রে পুজারী আর যজমানের প্রথা নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ঠিক ঠিক যারা তন্ত্রের সাধনা করেন তাঁদের সাধনা পুরটাই (Experimental) এই Experiment করতে গিয়ে তাঁরা দুটো জিনিসকে কাজে লাগান একটি হল Use of Ritual দ্বিতীয়টি Use of Energy Work আমাদের শরীরের ভিতরে যে ভরপুর প্রাণশক্তি রয়েছে বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে অফুরান্ত শক্তির খেলা চলছে, এনারা তাকে কাজে লাগান। তিথির সাথে পূজোকে এনারা যোগ করে দেন কারণ পূর্ণিমা, আমাবস্যা প্রভৃতি বিভিন্ন তিথিতে প্রকৃতির মধ্যে যে শক্তির তারতম্যের খেলা চলে সেটাকে তন্ত্রে কাজে লাগানোর জন্য। সাথে সাথে শক্তির ভিতরে যে প্রাণিক শক্তি চলছে সেটাকেও তন্ত্রের পূজাতে কাজে লাগান হয়।
তন্ত্রের মূল মন্ত্র 'হ্রীং' 'শ্রীং' 'ক্রীং'। 'ক্রীং' বীজমন্ত্রে যাঁরা সাধনা করেন তাঁদের প্রচুর ধন সম্পদ হয়। 'শ্রীং' বীজমন্ত্রে যাঁরা সাধনা করেন তাঁদের সব রকমের কাম উপলব্ধি হয়। 'হ্রীং' বীজমন্ত্রের সাধকের ধর্ম সাধন হয়। আর 'ওঁ' হল মোক্ষপ্রাপ্তির সাধনা। এখন কেউ যদি এই মন্ত্র জপ করে - " ওঁ হ্রীং শ্রীং ক্রীং পরমেশ্বরী স্বাহা "। এতে প্রথমে তাঁর পরমেশ্বরীর সাধনার সিদ্ধি হবে, তারপর ধনদৌলত হবে, এরপর সব রকমের কাম সাধন হবে আর ধর্ম সাধন হবে। ধর্ম সাধন হওয়া মানে, ইহলোক ও পরলোকে যতভাল গুণ আছে সব তাঁর মধ্যে এসে যাবে। আর 'ওঁ' সাধনা করছে বলে মোক্ষ পেয়ে যাবে। কিন্তু বেদান্তশাস্ত্রের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে যে, ওঁ সাধনা করছে তার সব মনঃকামনা ও ইচ্ছা পূর্ণ হয়। শক্তিমতে আবার অন্যভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তন্ত্রমতে এই বীজমন্ত্রের প্রচণ্ড মাহাত্য ও ক্ষমতা। বলা হয় প্রণব আর বীজমন্ত্র যদি একসাথে থাকে তাহলে সেই মন্ত্র খুব শক্তিশালী হয়। তবে সব মন্ত্রই গুরুমুখে লাভ করতে হয়। গুরুমুখে না পেলে, গুরু শক্তিসঞ্চার না করলে কোন কাজ হয় না।
*****************************************
যদি আপনাদের কোন উপকারে লাগে তাহলে
আপনাদের সামর্থমত সাহায্য করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন