শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫


                                             https://www.facebook.com/share/p/1Ac6psqroU/


অম্বুবাচী ব্রত: তত্ত্ব, পালন ও বিধিনিষেধ

অম্বুবাচী, হিন্দু ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র তিথি, যা মূলত ধরিত্রী মাতার ঋতুকাল হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সময় মাটি ‘অশুচি’ হয়ে পড়েছে বলে ধরা হয়, ঠিক যেমন নারীর ঋতুকাল চলাকালে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তেমনি ধরিত্রীকেও এই সময় বিশ্রাম দেওয়াই এই ব্রতের মূল ভাবনা। এই ব্রত প্রধানত আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষে পালিত হয় এবং কামাখ্যা মন্দিরসহ ভারত-বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এটি পালন করেন।


২০২৫ সালে অম্বুবাচীর সময়সূচি

👉 অম্বুবাচী শুরু হবে : (রবিবার দুপুরে)

২২শে জুন ২০২৫, রবিবার দুপুর ২:৫৬ মিনিটে (2:56PM)

👉 অম্বুবাচী শেষ হবে : (বুধবার রাত পোহালে)

২৬শে জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার ভোর রাত্রি ৩:১৯ মিনিটে (3:19AM)


এই সময়কালে পালিত হয় ধরিত্রী মাতার ‘ঋতুকাল’ এবং তাই এই সময় শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শুচিতার বিশেষ গুরুত্ব থাকে।

এই বিশেষ সময়  আসামের কামাখ্যা মন্দিরপুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং বীরভূমের তারাপীঠে মা তারার মন্দির বন্ধ থাকে। এই সময় দেবী দেবতার মুখ ঢেকে রাখা হয়। 


কারা পালন করতে পারেন অম্বুবাচী?

অম্বুবাচী ব্রত পালন করতে পারেন নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির মানুষ। যেমন:

বিধবা মহিলারা,  তন্ত্রসাধক ও তান্ত্রিকরা,  ব্রহ্মচারী সাধু ও সন্ন্যাসীরা,  যে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্রতী।

তবে এই ব্রত সধবা (স্বামীস্থিত) নারীদের জন্য নয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, সধবাদের এই ব্রত পালন করা নিষিদ্ধ।


অম্বুবাচী পালনের নিয়মাবলি

অম্বুবাচী পালনের সময় কিছু কঠোর বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নিজেকে ও চারপাশকে শুদ্ধ রাখা এবং ধরিত্রীকে বিশ্রাম দেওয়ার আধ্যাত্মিক অনুশীলন করা।

🔥 ১. রান্না নিষিদ্ধ

ব্রতের সময় কোনওভাবেই আগুনে বা গ্যাসে রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে না। এই সময় ধরিত্রী ‘অশুচি’ বলে ধরে নেওয়া হয়, তাই আগুন ব্যবহার নিষিদ্ধ।

🍎 ২. নিরামিষ ও কাঁচা খাদ্য

ফলমূল, সাবুদানা, জল—এই সব সহজপাচ্য, আগুন ছাড়া খাবার খেয়ে থাকতে হয়। গ্যাস বা চুলায় রান্না করা খাবার একেবারেই নিষিদ্ধ।

🛁 ৩. ব্যক্তিগত পরিচর্যা বর্জন

তেল, সাবান, শ্যাম্পু—এই সকল প্রসাধনী ও পরিচর্যার সামগ্রী ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তিন দিন শেষে ভালোভাবে স্নান করে, শুদ্ধ বস্ত্র পরে ব্রত ভাঙতে হয়।

🛐 ৪. দেবী প্রতিমার মুখ ঢেকে রাখা

এই বিশেষ সময় বাড়ির সকল দেবী মূর্তির মুখ লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। তাঁদের মুখ দেখা বা পূজা করা যায় না। ব্রত শেষ হওয়ার পর দেবীকে স্নান করিয়ে নতুন বস্ত্র পরিয়ে পূজার আয়োজন করতে হয়।

🧺 ৫. ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখা

এই তিন দিনে ব্যবহৃত জামাকাপড়, বিছানার চাদর প্রভৃতি শুদ্ধ বস্ত্রের সংস্পর্শে আনা যাবে না। ব্রত শেষ হওয়ার পর এগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

🧼 ৬. ঘরবাড়ি শুদ্ধকরণ

নিজে স্নান করার আগে ঘর, বিছানা, কাপড়—সবকিছু ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হয়। তারপরে নিজে শুদ্ধ হয়ে দেবীদের শুদ্ধ করতে হয়।


উপসংহার :

অম্বুবাচী কেবল একটি ব্রত নয়—এটি প্রকৃতি, নারীশরীর ও শুদ্ধতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন। ব্রতের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ত্যাগ ও শুচিতার একটি বার্তা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একদিকে যেমন ব্যক্তিগত শুদ্ধতার চর্চা, তেমনি ধর্মীয় দায়িত্ব পালনেরও অংশ।